Saturday, 22 October 2022

হাম্পী ভ্রমন গাইড




১৫৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে এক শীতের সকাল। হাম্পির রাজা আলিয়া রামা রায়ার কাছে দিনটি একটু আলাদাই ছিল। বিগত প্রায় ২৫০ বছর ধরে তার পূর্বপুরুষরা তখনকার বিখ্যাত বিশাল বিজয়নগর সাম্রাজ্যকে ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ হিন্দু সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যার বিস্তৃতি কলিঙ্গ থেকে ভারতবর্ষের দক্ষিণের শেষ সীমানা পর্যন্ত। তারসাথে রয়েছে অর্থকারী মশলার ব্যাবসা। যে ব্যাবসার মাধ্যমে সুদূর পারস্য এমনকি ইউরোপ এর সাথেও যোগাযোগ রয়েছে। তারই রাজধানীতে মশলার সাথে নিয়মিত চলে মধ্য এশিয়া থেকে আনা অতি উচ্চমানের ঘোড়া কেনাবেচার ব্যাবসা। রাজ্যের মানুষ এর জীবন জীবিকা খুবই ভালভাবে কেটে যায়। ধনসম্পদ, মানি মানিক্যে রাজকোষ পূর্ন। তাদের রাজত্বের সুনাম এতই ছড়িয়ে পড়েছে যে পারস্য থেকে আসা পরিব্রাজক বলেই দিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ট এক রাজ্য। এমন দেশ তিনি আর কোথাও দেখেননি। 

কিন্তু গত কয়েক দশকে গোটা উত্তর ভারত সুলতানী ও মোঘল শাসন শুরু হয়েছে। তার নিজের রাজ্যের পাশেও রয়েছে মুসলিম সুলতানী শাসকদের রাজত্ব। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার ছোট খাটো যুদ্ধে তারা এমন ভাবে হেরেছে যে রাজা ওদের একেবারেই গ্রাহ্য করেন না। বিশাল বিজয়নগর রাজত্বের পাশে তারা একবারই নস্যি। মাঝে কয়েকবার তারা একটা আলোচনার ইচ্ছা জানলেও রাজা সেসবে একেবারেই গুরুত্ব না দিয়ে বেশ করে অপমান করে দিয়েছেন। আর কেনই বা শুনবেন ওসব রাজাদের কথা। বিজয়নগর রাজ্যের রয়েছে বিশাল সেনা বাহিনী, সেখানে বিদেশ থেকে আনা ঘোড়ার বাহিনী সহ রয়েছে বিশাল হাতি ও পদাতিক বাহিনী। তবে এবারে তার রাজ্যের চার দিকে থাকে চার ছোট ছোট রাজ্যের সুলতানী রাজারা তালিকাটে জোট বেঁধেছে, বিজয়নগর রাজার বিরুদ্ধে যুধ করবে বলে।
রাজা ভেবেছিলেন এবারও যুদ্ধ অন্য বারের মতন হবে। কিন্তু এবার সেটা হল না। রাজা ধরা পড়লেন সুলতানী রাজাদের হাতে। তৎক্ষণাৎ সুলতানী শাসক তার মুন্ডুছেদ করে এক বল্লমের মাথায় টানিয়ে বিজয়নগর এর সেনাদের ভয় দেখাতে থাকল। রাজার ভাইরা যুদ্ধে প্রতিরোধ না করে ভয় পেয়ে গেলেন। বিজয়নগর এর বিশাল সেনা বাহিনী নেতৃত্বের অভাবে ছত্র ভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেল। ২৩ জানুয়ারি ১৫৬৫ বিজয়নগর এর গৌরবময় সাম্রাজ্যের পতন ঘটল এই তালিকাটের যুদ্ধে।
যুদ্ধে জিতেই সুলতানী সেনারা আক্রমণ চালালো বিজয়নগর রাজধানীতে। সেই সময় বিজয়নগর ছিল প্রায় ১০ লাখ মানুষের বাস। নিমেষের মধ্যে সবাই প্রাণ বাঁচাতে সব ফেলে এই সুন্দর শহর ছেড়ে যে দিকে পারল পালিয়ে গেল। বিজয়নগরে চলল সুলতানী সেনাদের লুণ্ঠন। লুণ্ঠিত সম্পদ প্রায় ৬ মাস ধরে একশোটা হাতি দিয়ে তারা নিয়ে গেল এই সুন্দর শহর থেকে। গোটা শহর জুড়ে ছিল অসম্ভব সুন্দর কাজ, ছিল বহু মূর্তি, মন্দির আরো শহর সাজানোর কত কি! সুলতানী সেরাদের ক্রোধ গিয়ে পড়ল এসবের পরে। এক এক করে যা পারল সেটাই ভেঙে গুড়িয়ে দিল। তারপর একসময় সব শেষ করে তারাও এই সুন্দর শহরকে ধ্বংস করে চলে গেল। এর পর বিগত ৫০০ বছর ধরে শুধুই পড়ে রইল এক পরিত্যাগতো জনপদ।যা আর কখনোই আগের গৌরব লাভ করেনি।
আজ এই ভ্রমন কাহিনীতে এই হারিয়ে যাওয়া শহর বিজয়নগর বা বর্তমানের Hampi ঘুরে দেখব, এবং জানাবো কি ভাবে আপনি এখানে ঘুরে দেখে নিতে পারবেন সর্বকালের শ্রেষ্ট হিন্দু রাজার রাজত্ব।

 _____
আপনারা যদি গোয়া ভ্রমন এর পরিকল্পনা করেন তবে তার কাছে অবস্থিত Hampi অবশ্যই ঘুরে নেবেন। অবশ্য ইতিহাস ও ভারতের পুরনো ঐতিহ্যে সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে আপনার পছন্দের অন্যতম সেরা স্থান হতে পারে এই Hampi বা ইতিহাসের বিজয়নগর রাজ্য। Hampi গোয়া থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টা দূরে অবস্থিত। আবার Bangalore বা হায়দ্রাবাদ থেকেও কয়েক ঘণ্টায় Hampi পৌঁছানো যায়।
দুই দিনে কি ভাবে Hampi ও কিস্কিন্ডা ও ঘুরে দেখবেন, কোথায় থাকবেন ও খরচ কত হতে পারে, তার সম্পূর্ন তথ্য পাবেন এই ভিডিওতে। এটি Hampi ভ্রমন গাইড, ফলে সমস্ত জায়গা গুলির শুধুমাত্র মূল তথ্য টুকু তুলে ধরব। কোনো জায়গা সম্পর্কে বিশদে জানতে চাইলে সেই জায়গার vlog দেখে নিতে পারেন। লিংক description এ পেয়ে যাবেন।
---------------

Hampi ভৌগলিক অবস্থান
হাম্পী দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। জায়গাটি ব্যাঙ্গালোর থেকে ৩৫০ কিলোিটার, গোয়া থেকে ৩২০ কিলোমিটার এবং হায়দ্রাবাদ থেকে ৩৮০ কিলোমিটার, অর্থাৎ এই তিনটি জায়গার প্রায় মাঝামাঝিতে অবস্থিত। এখানে রয়েছে অগুণিত ছোটবড় টিলা এবং এর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে তুঙ্গভদ্র নদী। নদীর ওপর পাশে রয়েছে রামায়ণ এ বর্ণিত বালি ও সুগ্রীব এর কিস্কিন্দ। 



হাম্পীতে কি ভাবে পৌঁছাবেন
Hampi এর কাছের রেল স্টেশনের নাম Hospet।
হাওড়া থেকে Amaravathi Express -18047 করে hosapet পৌঁছে যান। এই ট্রেনটি করেই হাওড়া থেকে গোয়া পৌঁছানো যায়। আর যদি গোয়া থেকে আসতে চান তবে গোয়া হাওড়া ট্রেন করে অথবা গোয়া থেকে বাসে ৬ ঘণ্টায় Hampi পৌঁছে যেতে পারেন। তবে আপনি ব্যাঙ্গালোর থেকেও রাত্রির বাসে Hampi পৌঁছাতে পারেন। আবার বেশ কয়েকটি ট্রেন সন্ধ্যায় Bangalore থেকে ছেড়ে পরের সকালে Hospet পৌঁছায়। আর গাড়িতে যেতে চাইলে মাত্র ৭ ঘণ্টায় Hampi পৌঁছে যেতে পারেন। 
যদি আপনি হায়দ্রাবাদ থেকে ট্রেনে Hampi যেতে চান তবে Hyderabad-Kolhapur Express (11303) এবং Hyderabad -Vasco/Hubli Express (17603) ট্রেনে বা রাত্রির বাসে Hampi পৌঁছে যেতে পারেন।
Hospet পৌঁছে অটো নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন ১২ কিলোমিটার দূরের Hampi তে, অথবা লোকাল বাসও নিতে পারেন। তবে বলব Hospet থেকেই অটো ভাড়া নিয়ে নিন পুরো Hampi ঘুরে দেখবার জন্য। অটো ভাড়া দিন প্রতি ১৫০০-১৬০০ টাকার মধ্যে হওয়া উচিত।

হাম্পী এর ইতিহাস ও পৌরাণিক গুরুত্ব
ইতিহাসের বিজয়নগর এর বর্তমানের হাম্পী। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের কাহিনী আমরা ইতিহাস বইয়ে পড়েছি। বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল ভারতবর্ষের সব চেয়ে সমৃদ্ধশালী হিন্দু রাজত্ব। কথিত আছে সেই সময়ের পৃথিবীর সব চেয়ে ধনী শহর ছিল এই বিজয়নগর। 

হুক্কা ও বুক্কা দুই ভাই ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করেন। সম্ভবত হুক্কা রাজার অপর নাম প্রথম হরিহর। অতীতে তারা ছিলেন হয়েশালা রাজত্বের সেনাপতি। দিল্লির সুলতান বিন তুঘলক এর কাছে যুদ্ধে হেরে বন্দী হন। এরপর তারা বিন তুঘলক এর নির্দেশে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং হাম্পী এর অংশ শাসন এর দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী এর প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তারা আবার হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। এবং তারাই হয়ে ওঠেন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ট হিন্দু রাজা।
১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ এই রাজ্যের রাজা হন কৃষ্ণ দেব রায়। এনার সময় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সব চেয়ে বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। এবং বর্তমানের দৃশ্যমান বেশিরভাগ কীর্তি তার সময়েই তৈরি। 
তুঙ্গভদ্রা নদীর অপর পাশে রয়েছে রামায়ণের কিষ্কিন্ডা রাজত্ব । এখানে রয়েছে হনুমান এর জন্মস্থান। রামায়ণের শ্রীরাম চন্দ্রের সাথে হনুমানের সাক্ষাৎ। শ্রীরামের তীর মেরে পাথর থেকে জল বের করবার কাহিনী। বালি ও হনুমানের যুদ্ধের সময় শ্রীরাম তীর মেরে বালিকে এখানে বধ করেন এবং রাবণ সীতা মাকে অপহরণ করে নিয়ে যাবার পর এখানে একটা জায়গায় বসে শ্রীরাম বাকিদের সাথে মিলে তাকে উদ্ধার পরিকল্পনা করেন। 


কখন আসবেন
শীত কাল Hampi ভ্রমণের জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত সময়। গরমে এখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি এর বেশি হয়ে যায় ফলে গরমে এই জায়গায় না আসাই ভাল। তবে আগস্টে বৃষ্টি শুরু হলে যাবার ফলে এই সময় চাইলে আসতে পারেন। এই সময় মধ্য দুপুরে গরম হলেও সকাল ও বিকালের আবহাওয়া বেশ মনোরম। ফলে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে আসবার সব চেয়ে উপযুক্ত সময়। এই একই সময় আবার গোয়া ভ্রমণের জন্যও উপযুক্ত সময়। ফলে এই দুটি জায়গা এক সাথে প্ল্যান করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন
Hampi তে থাকবার মত বেশ কিছু হোটেল ও প্রচুর হোম স্টে রয়েছে। আবার।চাইলে Hospet থেকেও হাম্পি ঘুরতে পারেন। চাইলে এখানে এসে আপনি কোনো হোম স্টে খুঁজে নিতে পারেন অথবা অনলাইন এ বুক করে আসতে পারেন। তবে বলব পারলে অনলাইনে খুঁজে বা বুক করে এখানে আসুন তাহলে হোটেল খুজবার সময় বাঁচবে। আবার আপনার অটো ওলা আপনায় এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। তবে Hampi রইলে বাজারের কাছেই কোথাও থাকবার চেষ্টা করুন তাতে বিভিন্ন দিকে ঘুরবার সময় যাতায়াতের জন্য সুবিধা হবে। আমরা ছিলাম Rohit হোম স্টে তে তার ফোন নম্বর 9448853954/8550853276, এখানে আমাদের দিন প্রতি ১৫০০ টাকা ভাড়া লেগেছিল। বেশ সুন্দর পরিষ্কার ঘর এবং ভাল লোকেশনে। তবে খাবার খরচ বেশি, ফলে চাইলে বাইরে খেয়ে নিতে পারেন। এই হোম স্টে এর ভিডিও আমার hampi vlog এ পেয়ে যাবেন। আর এখানে রয়েছে বেশ কিছু দামী হোটেল, এমনই একটা hampi মিউজিয়াম এর উল্টো পাশে রয়েছে যেখানে অনেক বিদেশিদের দেখেছি। এখানের একদিনের ঘর ভাড়া ৫০০০ টাকার কাছাকাছি তবে অনলাইনে ভাল অফার পেলে কমে ঘর পেয়ে যাবেন।

Hampi কি ভাবে ঘুরবেন ও কি দেখবেন
Hampi ঘুরবার জন্য সব চেয়ে ভাল উপায় এখানে এসে অটো ভাড়া নেয়া অথবা Hospet থেকে বাইক ভাড়া নিয়ে নিন। অটো ভাড়া দিনে ১৫০০ টাকার মত হবে এবং বাইক বা স্কুটার ২৫০-৩৫০ টাকার মত হবে। তেল এর খরচ আপনার।  


 Hampi তে মোট ৮৪ টি জায়গা আছে, ফলে সবটা দেখা খুবই কঠিন। তবে অন্তত দুই দিন হলে প্রধান জায়গাগুলো ঘুরে নিতে পারবেন। প্রথম দিন Hampi এর শহরের মধ্যে ও আশপাশে ঘুরে নিতে পারেন। তুঙ্গভদরা নদীর এক পাশে রয়েছে Hampi অন্য পাশে কিস্কিন্দা। দুই দিক দুই দিনের প্ল্যানে ঘুরলে সুবিধা হবে। আমি প্রথম ও দ্বিতীয় দিন হিসাবে বলছি আপনি নিজের সুবিধামত প্রথম বা দ্বিতীয় দিন ঠিক করে নিতে পারেন।

প্রথম দিন

প্রথম দিন দূরের জায়গাগুলো অর্থাৎ কিষ্কিন্দা ও বিজয়া ভিতারা মন্দির দেখে নিন।

রাম মন্দির, এখানে শ্রীরাম তীর দিয়ে পাথর থেকে জল বের করেছিল। সকালে টিফিন করে সোজা চলে আসুন এখানে। এই জায়গাটা দেখতে ৩০-৪৫ মিনিট সময় নিন।
বজরং বলীর মন্দির, রাম মন্দির দেখা হলে চলে যান যেখানে শ্রীরামের সাথে হনুমানের দেখা হয়েছিল সেই জায়গায়। এখানে একটি হনুমান বা বজরং বলির মন্দির আছে। একটা মন্দির তাছাড়া বিশেষ কিছু দেখার নেই এখানে। এখানে ১৫-২০ মিনিট থেকে চলে যান পরের স্থানে।

হনুমানের জন্মস্থান
এর পর তুঙ্গভদ্রা নদী পার করে চলে যান বজরং বলি বা হনুমানের জন্মস্থানের জায়গায়। এখানে পাহাড়ের ওপরে হনুমান এর মায়ের একটি মন্দির রয়েছে। এখানের হনুমানের মুখের আকারের পাথরটি দেখতে ভুলবেন না। এই মন্দিরটি দেখতে আপনায় প্রায় ৫৫০ টি সিড়ি ভেঙ্গে উঠতে হবে। ফলে শারীরিক ভাবে যথেষ্ট সমর্থ না হলে উঠবার চেষ্টা করবেন না। এখানে উঠতে ও নামতে মোট দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। ফলে কম করে ২-২.৫ ঘণ্টা সময় রাখুন এর জন্য। এখানে প্রতি শনিবার বড় করে পূজা হয়, ফলে এই দিন বেশ ভিড় থাকে।



সানাপুর লেক / গোল নৌকা ভ্রমণ
বজরং বলীর জন্মস্থানের মন্দির দেখে চলে যান নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। এখানে আপনি বেশ কিছুক্ষন নৌকা বিহার করে নিতে পারেন। মাথা পিছু প্রতি আধ ঘন্টায় সাধারণত ৫০০-৬০০ টাকা মত নিয়ে থাকে।
চিন্তা মনি মন্দির 
চিন্তা মনি মন্দির শ্রীরামের উদ্দেশ্যে তৈরি। রাবণ যখন সীতা মা কে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তারপর শ্রীরাম চন্দ্র হনুমানজী ও অন্য সব সবাইকে নিয়ে এখানে বসে কি করা উচিৎ , কি ভাবে সীতামা কে উদ্ধার করা যায় সেসব পরিকল্পনা করেন। এখানে রয়েছে একটা বিশাল পাথর যাকে রাম পাথর বলে। অদ্ভুত সেই পাথর, বিশাল পাথর যা কিনা রয়েছে আরো কতকগুলো পাথরের ওপর ভর করে মাটি থেকে বেশ কিছুটা উচুতে। এর নিচে যদি কেউ থাকে ওপর থেকে কোনোভাবেই কিছু বোঝা যায় না। এছাড়া এখানে রয়েছে একটি ঘর যেখানে শ্রীরামচন্দ্র কাটিয়েছিলেন। এই মন্দিরটি তুঙ্গভোদ্র নদীর ঠিক পাশে অবস্থিত আর তার বিপরীত পাশেই রয়েছে বিজয়া বিত্তারা মন্দির।



বিজয়া ভিত্তারা মন্দির 
Hampi এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ স্থান বিজয়া ভিত্তরা মন্দির। এটি একটি বিষ্ণু মন্দির। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনে এই মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এবং বর্তমান এখানে আর পূজা হয় না । 
এই মন্দিরের থেকে প্রায় এক কিলমিটার দূরে গাড়ি রেখে তারপর পেয়ে হেঁটে যেতে পারেন অথবা পার্কিং এর পাশের থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি পাবেন মন্দির পৌঁছানোর জন্য। ইলেকট্রিক গাড়ি ভাড়া মাথা কিছু ২০ টাকা যাতে আপনি যাওয়া ও ফেরা দুইই করতে পারেন। বয়স্ক বা বাচ্চা না থাকলে হেঁটে গেলে রাস্তায় আরো দুই একটি ছোট মন্দির পড়ে সেইগুলো দেখে নিতে পারবেন। এই মন্দিরের প্রবেশ মূল্য মাত্র ৪০ টাকা, যা দিয়ে এই মন্দির, মিউজিয়াম ও লোটাস মহল দেখা যাবে। তবে টিকিট এক দিনের জন্যই বৈধ্য।
মন্দির পৌঁছানোর আগে দেখবেন এই মন্দিরের সামনে রয়েছে অনেকগুলি থাম। যেটা বিত্তরা বাজার নামে পরিচিত। এই মন্দিরে যাবার সময় এইগুলো দেখা যায়। আগে এক সময় এখানেই বসত বিশাল বাজার। যেখানে বিদেশি ঘোড়া, দেশী মশলা ও সোনা রূপা ইত্যাদি কেনা বেচা চলত। 
এখানে রয়েছে hampi এর বিখ্যাত রথ । পুরাণ মতে বিষ্ণুর বাহন হল তার রথ। পাথরের তৈরি এই রথটি তার জনই তৈরি। এমন রথ গোটা ভারতে মত তিন টি আছে, একটি hampi তে, আরেকটি কোনারক এ এবং তৃতীয়টি মহাবলিপূরম এ।


এই মন্দিরের আরেকটি আশ্চর্য হল মিউজিক্যাল পিলার বা সা রে গা মা পা পিলার। এই পিলার আঘাত করলে সা রে গা মা পা এর সাত টি সুর বাজে। আর তার সাথে রয়েছে প্রতিটি সুরে এর আট টি স্কেল। এর জন্য এখানে মত ৫৬ টি পিলার রয়েছে। কিভাবে পাথরের তৈরি জিনিস থেকে এমন সুর বের হতে পারে এটা আশ্চর্য্য। আর এটা কি ভাবে সম্ভব সেটা বুঝতে ব্রিটিশ সরকার এটা নিয়ে গবেষণা চালায়। কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তারা মনে করে এই পাথরের মধ্যে কিছু রয়েছে। ফলে দুটি পিলার কেটে দেখে কিছু আছে কিনা। এই কাটা পিলার দুটি আজও ওখানে রয়েছে। অর্থাৎ এখানে মত ৫৪ টি পিলার ভাল অবস্থায় রয়েছে। 



কিংস ব্যালান্স বা রাজার তুলাযন্ত্র 
এটি রাজার দাড়ি পাল্লা বলা যায়। বছরের বিশেষ দিনে যেমন দুর্গাপূজার সময়, চন্দ্র বা সূর্জগ্রহনের সময় অথবা এমন কোনো বিশেষ দিনে রাজা মন্দিরের পুরোহিতদের তার সম ওজনের সোনা রূপা ও অন্য সব দামী মনিমুক্ত দান করতেন। এই জন্য রাজা বসতেন এই তুলা যন্ত্রের একপাশে আর অপর পাশে সমস্ত মূল্যবান সামগ্রী রাখা হয়। এই ঘটনার আগে রাজার সাথে বেশ কিছু বিশেষ আয়োজন করা হত যা আমি আমার vlog এ বিশদে জানিয়েছি। সেসব গল্প জানতে চাইলে hampi vlog দেখে নিতে পারেন। 
বিজয় ভিত্তরা মন্দির ও অন্য জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে সব মিলিয়ে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগতে পরে। অনেকসময় এখানে বেশ ভিড় হয়। 
এই কয়টি স্থান দেখতেই হয়ত আপনার পুরো দিন কেটে যাবে, ফলে এই দিন হয়ত আর কিছু দেখবার সময় পাবেন না। আর এই সকল জায়গার আশেপাশে খাবার জায়গা সেভাবে নেই। যার ফলে সাথে শুকনো খাবার ও জল রাখবেন। তবে হালকা খাবার, চা বা ডাবের হল প্রায় সকল জায়গায় পেয়ে যাবেন।


দ্বিতীয় দিন



Virupaksha Temple / বিরূপাক্ষ মন্দির
দ্বিতীয় দিন সকালে উঠেই প্রথমে চলে আসুন বিরূপাক্ষ মন্দিরে। বিরূপাক্ষ মহাদেব বা শিব ঠাকুরের এক নাম।  Hampi এর একমাত্র এই মন্দিরে আজও নিয়মিত পূজা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে এখানে পূজা দিতে পারেন। সুলতানরা বিজয়নগর দখল এর পরে Hampi এর সকল মন্দির কে কেন কিছু করেনি সেটা এক বিশ্বয়। অনেকে মনে করে এই মন্দির বিজয়নগর এর রাজারা তৈরি করেনি বলে তারা এটিকে আক্রমণ করেনি আবার অনেকে মনে করে এই মন্দিরে বিজয়নগর এর রাজার প্রতীক ছিল যাতে একটি শুকরের ছবি থাকায় তারা এটাকে হারাম মনে করে এর ভেতরে প্রবেশ করেনি। কারণ যাই হোক, এই মন্দির এখনো অক্ষত এবং এখানে দেবাদিদেব মহাদেব বিরূপাক্ষ রূপে প্রতিদিন পূজা পেয়ে থাকেন। এই মন্দিরের পাশেই আছে একটি বড় পুকুর আর তারই পাশে রয়েছে দূর্গমন্দির। এই মন্দিরের প্রধান তোরণ বা প্রবেশদ্বার খুবই বড় এবং অতীতে এর সামনে বাজার বসত। এই মন্দিরের ভেতরে রয়েছে একটি অন্ধকার ঘর, যেখানে প্রতিদিন সকালে এই প্রধান প্রবেশদ্বার এর উল্টো প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। তবে এর জন্য আপনাকে সকালে আসতে হবে। আর এখানে রয়েছে প্রায় ১০০ বছরের পুরনো হাতি লক্ষী, যে অনেকসময় দর্শনার্থীদের থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে ও আশীর্বাদ করে। 
এই মন্দিরে প্রবেশের জন্য জুতো প্রতি দুই টাকা দিয়ে জুতো বাইরে জমা রেখে যেতে হবে। মন্দিরের প্রধান বিগ্রহ কাছ থেকে দর্শনের জন্য মাথা পিছু ২৫ টাকার টিকিট নিতে হবে আর যেকোনো ক্যামেরার জন্য ৫০ টাকা দিয়ে ছবি ও ১৫০ টাকা দিয়ে ভিডিও নিতে পারবেন। মোবাইল ক্যামেরার জন্যও এই টিকিট লাগবে।
গাড়ি পার্কিং এর জন্য মন্দিরের সামনে ও পেছনে ব্যাবস্থা রয়েছে।


Sasivekalu Ganesha
বিরূপাক্ষ মন্দিরের সামনেই রয়েছে দুটি গণেশ মন্দির। ছোট গণেশ মন্দির যাকে সশিভিকালু গণেশ মন্দির নামে পরিচিত। এটি বিরূপাক্ষ মন্দিরের থেকে হেঁটে ৪-৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পারবেন।


Kadalekalu Ganesha
বিরুপাক্ষ মন্দির আর ছোট গণেশ মন্দিরের মধ্যেই রয়েছে কাদেলেকাভু গণেশ বা বড় গণেশ মন্দির। এটি ১৩ ফুট বড় একটা পাথরের তৈরি গণেশ মূর্তি। এর পেটটা দেখতে ছোলার মত যার জন্য একে এমন নামে ডাকা হয়। 
এই জায়গায় অনেকগুলি খাবার দোকান আছে, মূলত ইডলি ধোসা জাতীয় খাবার পাবেন।

Lakshmi Narasimha Temple
লক্ষী নারাসিমা বা উগ্রু নরসিমা মন্দিরটি গণেশ মন্দির গুলি থেকে একটু দূরেই অবস্থিত। 



Badavilinga Temple (Shiva Linga)
উগ্র নরশিমা মূর্তির ডান পাশে রয়েছে প্রায় ৩-৪ ফুট বড় একটি শিব লিঙ্গ। অতি সুন্দর এই মূর্তিটি। 

Lotus Mahal
লোটাস মহল Hampi এর অপর আরেকটি গুরুত্তপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। এখানের জন্য আপনার টিকিটের প্রয়োজন হবে। অবশ্য এই একটি টিকিট দিয়ে বিজয়া ভিত্তারা মন্দির ও মিউজিয়াম দেখা যায়। টিকিট মূল্য মাত্র ৪০ টাকা। 

Queen's Bath
Old Palace (Gagan Mahal)
Elephant Stables / হাতিশালা 
Maha Navami Dibba
Stepped Tank (Black Stone Pond)
Pushkarani


Underground Temple-Prasanna Virupaksha Temple
Krishna Temple
Tungabhadra River


মোট খরচ
ভ্রমণের জন্য খরচ কত হতে পারে এটা সঠিক ভাবে বলা সম্ভব নয়।  কারণ প্রতিটি মানুষের পছন্দ ও চাহিদা আলাদা হয়।  তবে নূন্যতম কত খরচ হতে পারে তার একটা হিসাব দিলাম। 

দুটি জনের পরিবারের যেমন খরচ হতে পারে তার একটা হিসাব এখানে দিলাম। ধরে নিচ্ছি আপনি অটোতে ঘুরবেন ।


হাওড়া থেকে হসপেট ট্রেন ভাড়া স্লিপার ৭০০ টাকা ৩ টিয়ার এসি ১৮৬৫ টাকা। অর্থাৎ যাতায়াত ১৪০০-৩৮০০ টাকা। 
অটো ভাড়া ১৫০০-১৮০০ টাকা  দিন প্রতি।  দুই দিনে ৩০০০ - ৩৬০০ টাকা। বাইক ভাড়া নিলে হসপেট স্টেশন থেকেই পেয়ে যাবেন।  সেক্ষেত্রে স্কুটার দিন প্রতি ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে হবে।  তেলের খরচ  আপনার।
টিকিট মাত্র ৫০ টাকা। 
গোল নৌকা ভ্ৰমণ ৫০০-৭০০ টাকা মাথা পিছু 
হোটেল দুই দিন, দিন প্রতি 1500-2500 টাকা। দুই দিনে 3000-5000 টাকা।
গোটা দিনের খাবার ৫০০-৭০০ টাকা মাথা পিছু , দুই দিনে ১০০০-১৫০০ টাকা। 
অনান্য ৫০০ টাকা  পিছু। 

No comments:

Post a Comment

পন্ডিচেরী ভ্রমণ গাইড

পন্ডিচেরী দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ভ্রমণ স্থান। পন্ডিচেরী জায়গাটি তামিলনাড়ুর পাশে বলা ভাল তামিলনাড়ু ঘেরা ছোট্ট একটি কেন্দ্রশাসিত জায়গা।  পন্ডিচে...