এবারের গন্তব্য হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ড। এটি ইউরোপের একটা ছোট্ট দেশ। দেশটা মাত্র 320 কিলোমিটার লম্বা আর সর্বোচ্চ 200 কিলোমিটার চওড়া। মত জনসংখ্যা 1 কোটি 70 লক্ষ। এত টুকু দেশের আবার 25% জায়গা কিনা সমুদ্রের থেকে নিচু! অনেক জায়গা আবার সমুদ্রের মাটি দখল করে করা। অর্থাৎ দেশটা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় অর্ধেক আর কলকাতার থেকে একটু বেশি জন সংখ্যা। অথচ দেশটা অতি উন্নত। মানুষের জীবনযাত্রার মান খুবই উঁচু, প্রায় পৃথিবীর সেরা কতকগুলো দেশের মধ্যে একটা। দেশ টার অনেকগুলো বড় কোম্পানি আছে যারা আমাদের এখানেও ব্যাবসা করে। যেমন ফিলিপস, ইউনিলিভার বা আমাদের দেশে হিন্দুস্তান লিভার যারা কোলগেট থেকে বহু জিনিস বানায় । আর সব চাইতে বড় কোম্পানি রয়েল ডাচ সেল যারা গোটা ইউরোপের মধ্যে সব চাইতে বড় কোম্পানি। মাত্র 1 কোটি 70 লক্ষ মানুষের পুচকে দেশটির আয় আমাদের ভারত বর্ষের অর্ধেক কিছু কম। এখানে মানুষেরা ডাচ নামে পরিচিত। এনারা পৃথিবীর মধ্যে সব চাইতে লম্বা।
যাইহোক আমি এক বছরের ভিসা পেয়েছি, যাব অফিসের একটা কাজে। তবে তার সাথে ঘোরা ফ্রী, অবশ্য সপ্তাহের শেষে। তাই হোক, এটাও বা কম কি। রথ দেখাও হবে আবার কলা বেচাও হবে। ইউরোপ এ এটা আমার প্রথম ট্যুর না হলেও এই যাত্রা টা আমার জন্য একটা কারণে স্পেশাল। এবার যাচ্ছি emirates এর business ক্লাস এ, যা অবশ্যই স্পেশাল।
সন্ধ্যায় 8 টা নাগাদ ব্যাঙ্গালোর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে আমার প্লেন। তার আগে ইমিগ্রেশন ও অন্য কাজের জন্য সাড়ে তিন টে নাগাদ বেরিয়ে পড়েছি। business ক্লাস এ emirates বাড়ি থেকে নিয়ে গন্তব্যের হোটেলে পৌঁছে পৌঁছে দেয়। এবং বাড়ি থেকে আনবার জন্য একটা ইয়া বড় সাদা রঙের BMW হাজির। ড্রাইভার দরজা খুলে, ব্যাগ পত্তর সব ডিকিতে তুলে দিল। নিজেকে বেশ স্পেশাল লাগছিল। স্ত্রী ও বাচ্চাদের বিদায় জানিয়ে চললাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশে।
ব্যাঙ্গালোরের জ্যাম চির পরিচিত। জ্যাম এড়াতে একটু আগে বেড়িয়েছি। শুক্র বার।রাস্তা ফাঁকা পাওয়া গেল। সাড়ে 5 টার আগেই এয়ারপোর্ট এ পৌঁছে গেলাম। অফিসের বাকি কলিগরাও প্রায় একই সময় চলে এলো। দাঁড়িয়ে ছিলাম সকলের সাথে একটা লাইনে, চেক ইন ব্যাগ জমা করতে। পারে জানলাম business ক্লাস এর জন্য লাইন আলাদা, যেটা একে বারে ফাঁকা।
ঝটপট ব্যাগ জমা করে চলে এলাম ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। তবে এখানে সবার জন্য একটাই লাইন। পাসপোর্ট চেক ও সিকিউরিটি হতে সময় লাগল প্রায় 20 মিনিট। ইতিমধ্যে প্রায় 6 টা বাজে। হাতে কোন ক্যাশ বা ইউরো নেই। cox and kings এ খোঁজ নিতে জানাল 7% চার্জ। শুনেই এক প্রকার পালালাম, কারণ রেট খুবই হাই। নিজের hdfc ব্যাংক এর কার্ড আগেই ইন্টারন্যাশনাল এক্টিভ করে নিয়েছি, ফলে তার ভরসায় বেরিয়ে পড়লাম। ইতিমধ্যে হালকা খিদে পেতে শুরু করেছে। emirates business ক্লাস এর একটা সুবিধা দেয় business লাউঞ্জ। যা ইচ্ছা খাও ও পান করো। পানের বিষয় আমার নেই, ফলে খাবারটাই হল। এর পর প্লেন এর জন্য অপেক্ষা।
7 টা নাগাদ প্লেন gate এর সামনে চলে এলো। এর পর প্লেনে অন বোর্ড। এবারও প্রথম সারিতেই পেয়ে গেলাম প্লেনে ঢুকবার সুযোগ, অবশ্য ফার্স্ট ক্লাস এর পরে। আমার প্রথম business ক্লাস যাত্রা। আর তারসাথে প্রথমবার জানালার ধারে বসবার সুযোগ। ভিডিও ও ছবি তোলার জন্য এটা জরুরি ছিল।
এমিরেটস বোয়িং 777 এর বিজনেস ক্লাস
নেদারল্যান্ড বা হল্যান্ড যাবার জন্য ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রথমে দুবাই ও তারপরে সেখান থেকে আমস্টারডাম যেতে হবে। এই প্লেন টি আমাকে দুবাই নিয়ে যাবে আর।
বোয়িং 777 বেশ বড় প্লেন তবে মোটেই সেরা নয়। ইন্টারন্যাশনাল যাত্রায় অনেক কোম্পানি এটা ব্যবহার করে। যদিও এই প্লেন এর যাত্রা আমার বিশেষ পছন্দ হয় না, কারণ বেশ ঝাকুনি হয়। আর মোটের ওপর কোন রকম প্লেন যাত্রাই আমার পছন্দ নয়। এক সিটে বসে থাকো, গুটিসুটি মেরে। গুটিসুটি মেরে বলছি কারণ এর আগের সব যাত্রাই ইকোনমি ক্লাসে এবং এটাই সাববিক। কারণ দুই ক্লাসের মধ্যে টিকিটের দামের পার্থক্য খুবই বেশি।
বিজনেস ক্লাস আমার জায়গা নিয়ে ধারণাটা পুরোই বদলে দিল। বাপরে এত জায়গা, আর যেন নিজস্ব কেবিন! সিটকে পুরো শুয়িয়ে দেয়া যায় ঘুমানোর জন্য। জাস্ট একটা সুইস চাপলেই হল। সিটকে দরকার মত যে কোন পজিশনে এনে আরাম করো। তার সাথে আছে এলাহী খাওয়ার ব্যাবস্থা। এবং অবশ্যই ইচ্ছা মত অতি উৎকৃষ্ট মানের পানীয়। তবে আমার পছন্দ আপেল বা কমলা লেবুর রস।
সিটের সামনের স্ক্রিন বিভিন্ন মুভি তে ঠাসা। আর তার সাথে প্লেন এর ক্যামেরা দিয়েও বাইরেটা দেখা যায়। তাছাড়া প্লেন কোথায় আছে, কত গতিতে চলছে, বাইরের তাপমাত্রা কত এসবও দেখায়।
দুবাই পৌঁছাতে ভারতীয় সময় রাত সাড়ে 11 টা থেকে 12 টা হবে। ফলে খাবার পর হালকা ঘুমিয়ে নেয়া ভাল। লাইট অফ করে সিট টাকে শুয়িয়ে দেবার মত সেট করে একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
উডেন ফিনিশে প্লেনের ভেতরের ডেকোরাসন টা সত্যিই দারুন। একটা সেলফি নিয়ে রাখলাম।
No comments:
Post a Comment