লেখাটি কেমন লাগল দয়া করে কমেন্টে জানাবেন। আমার ভ্রমণের Youtube চ্যানেল Bhromon India
একটা দেশ যারা কিনা বাধ্য হচ্ছে কয়েদির অভাবে জেল বন্ধ করে দিতে, ভাবা যায়? সত্যিই তাই। এটা নেদারল্যান্ড। পৌনে দুই কোটির কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ দূরত্বের একটা দেশ। হ্যাঁ এরা শান্তির নিরিখে পৃথিবীর সেরা 5 দেশের একটা।
পৃথিবীর একটা বড় সংখ্যক মানুষ যখন ধর্ম নিয়ে মত্ত সেখানে প্রায় 50% ডাচ ধর্ম জিনিসটাই পরিত্যাগ করেছে। যদিও এখানে যথেষ্ট পরিমাণে চার্চ আছে। এখানে রাস্তায় ঘুরবার সময় মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে প্রাণোচ্ছল যুবক যুবতীদের। হয়ত পড়াশোনা করে বা হয়ত কোনো কাজ করে। কোনো কাজই ছোট ভাবে দেখে না। রাস্তায় হয়ত দেখবেন তারা কেউ আলিঙ্গনবদ্ধ, বা নিছক হাসিঠাট্টায় মত্ত। দিন হোক বা রাত, মানুষের মধ্যে কোনো ভয় নেই। গভীর রাতেও যুবক যুবতীরা অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় কান পাতলেই শোনা যায় এদের সর্বদা খুশির কলরব। দুপুরে দেখেছি স্কুল ফেরত ছেলে মেয়েরা নিশ্চিন্তে হোটেলে ঢুকে ফ্রী তে খাবার খাচ্ছে। হোটেল গুলিও লাঞ্চ সময় পেরিয়ে গেলে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খাবার গুছিয়ে রেখে দেয়। কোনো খারাপ খাবার নয়, যেগুলো আমরা কিনে খেয়েছি সেই একই খাবার যত্ন করে রাখে। আর অপেক্ষা করে কখন তারা আসবে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় কিছুদিন তারা আসছে না। তাই আমাদের হোটেলের সেফ এর মন খারাপ। জানাল সেও স্কুলের সময় একই কাজ করত, এবং এটাই এখানের রীতি।
অত্যাধুনিক রোটাড্যাম শহর, ২য় বিশ্বযুদ্ধে এই শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তার পর আবার নতুন করে তৈরী হয়েছে।
হল্যান্ডের মানুষরা পৃথিবীর মাথা পিছু সব চেয়ে বেশি সাইকেল ব্যবহার করে। ওখানে মানুষের চেয়ে সাইকেল এর সংখ্যা বেশি। সকল রাস্তায় গাড়ি পাশাপাশি সাইকেলের জন্যেও সাইকেল এর আলাদা জায়গা থাকে। এখানে রীতিমত সাইকেল এর জন্য জ্যাম হয়ে থাকে।
রাস্তার ধারে iphone হোক বা জুয়েলারী দোকান সবই একটা কাঁচের দেয়ালের ওপাশে। গহনা গুলো রাস্তা থেকেই দেখা যায়। কেউ নেই ভেঙে নিয়ে যাবার। গোটা রাত এভাবেই থাকে।
ওখানে আছে এদের দেশের পার্লামেন্ট। প্রধানমন্ত্রী ও অন্য সব মন্ত্রীরা এখানে বসে দেশের নিয়ম নির্ধারণ করে। কিন্তু নেই কোনো পুলিশ বা সিকিউরিটি। যে কেউ যে কোনো সময় অনায়াসে যেতে পারে। আবার অনেকে এর ভেতর দিয়ে সাইকেল নিয়ে শর্টকাট করে ওপাশে চলে যায়। শুনেছি নেদারল্যান্ড এর প্রধানমন্ত্রীও নাকি সাইকেলে তার অফিস আসে।
ডাচ পার্লামেন্টের ভেতরে
ভাল লাগে এরা অবসরে অর্থাৎ শুক্রবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত হৈ হুল্লোড় করে ঘুরে বেড়ায়। কোনো চিন্তা নেই। স্কুল সরকারি। ডাচ ভাষা মূল হলেও ইংরেজি সহ ইউরোপের অন্য ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। সম্পূর্ন ফ্রী। স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা ফ্রী। সামাজিক বিভিন্ন সুরক্ষা থাকায় এদের ভবিষ্যত নিয়েও তেমন চিন্তা নেই। রিটায়ারমেন্ট এর পর সরকার সকলের পেনশন এর ব্যবস্থা করে।
নেগেটিভ দিক গুলির মধ্যে এখানে মদ্য পান, গাজা এগুলো এখানে সরকারি নিয়মেই ছাড়। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সাথে এখানে বেশ্যাবৃত্তি আইনত পেশা। সরকার এই পেশাকে ব্যাবসা হিসাবে দেখে ও ট্যাক্স নেয়।
স্থানীয় মানুষের অবস্থা বেশ ভাল হলেও কিছু গরিব মানুষ আছেন যাদের নিজেদের কোন ঘর নেই। এদের হোমলেস বলে স্থানীয়রা। তবে সাধারণত এরা বিদেশি। আশ্চর্যের এনারা কি ভাবে এখানে এমন ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিয়ে থাকেন।
এখানের বিশেষ খাবার, এক প্রকার কুকিজ, নাম stroopwaffels । দুটি পাতলা বিস্কুটের মাঝে কেরামেল দেয়া। বিভিন্ন ফেভার এর হয়ে থাকে। বিফ, pork প্রধান মাংস। আর খাবার এর শেষে অবশ্যই চিজ। ছুটির দিনে সকাল বাদে বাকি সব সময়ই হার্ড ড্রিঙ্কস অল্প পরিমাণে থাকে খাবারের সাথে। আর আছে বিভিন্ন ধরনের চকলেট। এখানের দোকানে বেবি ফুড ও বিয়ার পাশাপাশি বিক্রি হয়।
নেদারল্যান্ড টিউলিপ ফুলের জন্য বিখ্যাত। মার্চ মাসের শেষ থেকে চারিদিকে বিভিন্ন ধরণের ফুলে ভরে যায়। ছোট্ট এই দেশটি গোটা ইউরোপে ফুল রপ্তানি করে । যা ইউরোপের যে কোনো প্রান্তে পৌঁছে যায় মাত্র 24 ঘন্টার মধ্যে।
টিউলিপ ফুলে ভরে গিয়েছে চারদিক
রাস্তায় ফুলের সজ্জা
এই দেশে বেশ কিছু ভারতীয় ও বাংলাদেশি বাস করে। অন্য শহরের সাথে সাথেও হেগ শহরে আছে বেশ কিছু ভারতীয় ও বাংলাদেশি হোটেল।
এখানে এসে ঘুরে ফিরে যা বুঝলাম এখাবের মানুষ বেশ সুখে ও নির্ঝঞ্ঝাট এ বাস করে। পৃথিবীর সব চেয়ে লম্বা মানুষগুলি খুবই শান্তিতে বসবাস করে নিজেদের ছোট্ট দেশে।
সুমন বিশ্বাস
Youtube: Bhromon India