Thursday, 29 August 2024

পন্ডিচেরী ভ্রমণ গাইড

পন্ডিচেরী দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ভ্রমণ স্থান। পন্ডিচেরী জায়গাটি তামিলনাড়ুর পাশে বলা ভাল তামিলনাড়ু ঘেরা ছোট্ট একটি কেন্দ্রশাসিত জায়গা।  পন্ডিচেরী সমুদ্রপ্রেমী ও ধার্মিক মানুষের জন্য খুবই উপভোগ্য জায়গা।  

  • সংক্ষেপে বিশেষ তথ্য 
    • কি ধরনণের ঘুরবার জায়গা: সমুদ্রসৈকত ও ধর্মীয়।  
    • বছরের কখন ঘুরতে যাওয়া যায়:  জায়গাটি দক্ষিণ ভারতে ও সমুদ্র এর পশে হবার জন্য এখানে গরম বেশ বেশি।  ফলে বছরের সব সময় যাওয়া গেলেও অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে আবহাওয়া খুবই ভাল থাকে। মে মাস নাগাদ এখানে খুবই গরম থাকে।
    • কত সময় প্রয়োজন ঘুরবার জন্য: ২ থেকে ৩ দিন।  
    • কাছের বড় শহর: চেন্নাই, তবে পন্ডিচেরী নিজেই একটা বড় জায়গা। 
    • কিভাবে যাওয়া যায়: কলকাতা থেকে প্লেনে ও ট্রেনে।
  • সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ১৬৭৩ সালে ফরাসিরা পন্ডিচেরী অধিকার করে, পরবর্তীতে ব্রিটিশদের সাথে ফরাসিদের অনেকবার যুদ্ধ হয়েছিল এই পন্ডিচেরির অধিকার নিয়ে তবে প্রায় সব সময়ই ফরাসিরা তাদের অধিকার পন্ডিচেরির পরে কায়েম রাখতে পেরেছিল। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর ১৯৫৪ সালে ফরাসিররা পন্ডিচেরী ভারত সরকারের কাছে হস্তান্তর করে  এবং ১৯৬২ সালে আনুষ্টানিক ভাবে পন্ডিচেরী ভারতবর্ষের অংশ হয়।  পন্ডিচেরিতে এখনো ফরাসি সংস্কৃতি বজায় আছে।   
  • কিভাবে যাবেন, কলকাতা থেকে পন্ডিচেরীতে ট্রেন বা প্লেনে চলে আসতে পারেন। হাওড়া থেকে ১২৮২৭ ট্রেন টি সরাসরি পন্ডিচেরিতে আসে, ট্রেনটি শুধুমাত্র রবিবার হাওড়া ছেড়ে আসে। অন্যথায় হাওড়া থেকে ভেল্লুপুরম জংশনে (VM) সপ্তাহে ১২৬৬৩, ১২৬৬৫ দুটি ট্রেন আসে।    তবে সরাসরি ট্রেন বা প্লেন পাবেন না ভাল হয় কলকাতা থেকে চেন্নাই এসে বাসে পন্ডিচেরিতে চলে আসুন। চেন্নাই থেকে পন্ডিচেরী বাসে ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে।  পথে মহাবলীপুরম ঘুরে নিতে পারেন।  
  •  যদি ব্যাঙ্গালোরে থেকে আসতে চান তবে বাস বা ট্রেন পেয়ে যাবেন। গাড়িতেও পৌঁছে যেতে পারেন 

    • Show location in Google map.

  • রাস্তাও কি কি দেখাবার আছে , if traveler is visiting by private car or taxi this information will be helpful.
  • কোথায় কোথায় ঘোরা যায়cover all the places with as much as information possible
    • How can travel/Way to travel
    • Estimated cost of travel
    • Duration to cover the place
    • Timing for visitor, opening and closing, if any
    • Peak season.
  • কোথায় থাকবেন .
  • কোথায় খাবেন .
  • বিশেষ কি করবার আছে .
  • Closing note
  • Add photos, videos and reference where-ever is possible.
  • Use relevant and good label which helps to categorized post better and increase search capability on Google, so more people can read it.

Saturday, 6 April 2024

ব্যাঙ্গালোরের সেরা ১০টি ঘুরবার জায়গা, Top 10 tourist places in Bangalore

 ব্যাঙ্গালোর এর সেরা ১০ টি ঘুরবার জায়গাগুলি -

  • 1. লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন : এই উদ্যানটি ব্যাঙ্গালোরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই উদ্যানটি 240-একর জুড়ে রয়েছে এবং 1,800 টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এই উদ্যানে একটি গ্লাসহাউস, একটি হ্রদ এবং অনেকগুলি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। প্রতি বছর, ২৬শে জানুয়ারি ও ১৫ অগাস্ট উপলক্ষ্যে বছরে দুইবার ফুলের শো অনুষ্ঠিত হয় যা সাধারণত এক সপ্তাহ ব্যাপী চলতে থাকে। এই ফুলের শো উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে ভিড় জমায়। বোটানিক্যাল গার্ডেন সর্বসাধারণের জন্য প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখার সব সময় ভাল সময়।বাগানে, মোবাইলে ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফির অনুমতি থাকলেও সাধারণ বা ডিজিটাল ক্যামেরা, ট্রাইপড এবং জিনিস যা বাগানের উদ্ভিদ জীবনের ক্ষতি করতে পারে  এমন কিছু নিয়ে প্রবেশের অনুমতি নেই।  দর্শনার্থীরা বাগানে খাবার বা পানীয় বাইরে থেকে আনতে পারবে না তবে এই বাগানের ভেতর কিছু অনুমোদিত স্টলের থেকে খাবার কিনে খাওয়া যাবে। এছাড়া বাগানের প্রবেশপথের বাইরে অনেকগুলি  খাবার ও পানীয়ের স্ট্যান্ড রয়েছে। ২০২৪ সালে এই উদ্যানের প্রবেশমূল্য ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি 25 টাকা। বিদেশীদের জন্য জনপ্রতি 300 টাকা। গ্রীন লাইন মেট্রোর লালবাগ স্টেশনে নেমে হেটে এই উদ্যানে পৌঁছাতে পারবেন।  জয়নগর বা বনশঙ্করি যাবার বাস গুলি এই গার্ডেনের ৪ টি প্রবেশদ্বারের যেকোনোটির পাস দিয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে এখানে এলে প্রবেশ দ্বারের সামনেই পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে. তবে ফুলের শো এর কয়দিন অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এই পার্কিং বন্ধ থাকে।

লালবাগ বোটানিক্যাল গার্ডেন, ব্যাঙ্গালোরে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস নিম্নরূপ:

সময় নির্বাচন: লালবাগ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে, সোমবার এবং মঙ্গলবার বাদে।

প্রবেশ মূল্য২০২৪ সালে এই উদ্যানের প্রবেশমূল্য ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি 25 টাকা। বিদেশীদের জন্য জনপ্রতি 300 টাকা। 

ফুলের প্রদর্শনী: বছরে দুইবার (২৬ জানুয়ারি এবং ১৫ আগস্ট) লালবাগের গ্লাস হাউসে ফুলের প্রদর্শনী হয়, যা দেখা অবশ্যই উচিত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: লালবাগের বিশাল সবুজ এলাকা, লেক, এবং বিভিন্ন ধরনের গাছপালা উপভোগ করুন।

পরিবহন: ব্যাঙ্গালোর সিটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে অটো বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে লালবাগে যাওয়া যায়, এবং লালবাগ মেট্রো স্টেশনও রয়েছে


2. বান্নেরঘাটা জাতীয় উদ্যান:  ব্যানারঘাটা জাতীয় উদ্যান, ব্যাঙ্গালোরে কেন্দ্র থেকে থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা দূরে অবস্থিত প্রায় ২৬১ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে থাকা এক বিশাল জাতীয় উদ্যান।  এই জাতীয় উদ্যানের মূখ্য আকর্ষণ হল:

সাফারি: এখানে সিংহ এবং বাঘের সাফারি আছে।  এখানে প্রাণীদের জঙ্গলে ছেড়ে রাখা আছে আর পর্যটককে একটা গাড়িতে করে সেইসব জায়গা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। জায়গাটায় আপনি প্রচুর হরিণ , রয়েল বেঙ্গল টাইগার , সাদা বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ , হাতি, বিভিন্ন ধরণের সাপ  আরো  অনেক জন্তু-জানোয়ার দেখতে পাবেন।    
    • চিড়িয়াখানা: এখানে একটি চিড়িয়াখানা আছে, যেখানে ৪৮ প্রজাতির প্রাণীদের রয়েছে। 
    • জীববিজ্ঞান শিবির: এখানে একটি জীববিজ্ঞান শিবির রয়েছে, যেখানে একটি বাটফ্লাই গার্ডেন বা প্রজাপতি উদ্যান রয়েছে।  
শহরের বিভিন্ন জায়গাথেকে এখানে পৌঁছানোর বাস পাবেন।  তাছাড়া গাড়ি বা অটো ভাড়া করেও পৌঁছে যেতে পারেন।   

বান্নেরঘাটা জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হল:

  • প্রস্তুতি: উদ্যানে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নিন। জলের বোতল, টুপি, সানস্ক্রিন এবং আরামদায়ক জুতা নিয়ে যান।
  • সময়উদ্যানটি মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯:৩০ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা।  সাফারির সময় ১০ থেকে ৪:৩০, দুপুরে লাঞ্চের জন্য ১ ঘন্টা বন্ধ থাকে । সপ্তাহান্তে ভিড় এড়াতে বিকেল ২টার আগে পৌঁছানো উত্তম।
  • টিকেট প্রবেশ মূল্য আপনি কিভাবে সাফারি করবেন তার পর নির্ভর করে।  সাধারণ বাস , এসি বাস গাড়ি, জিপ এসব নিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন। মাথাপিছু টিকিট ১৪০ টাকা থেকে  শুরু।  জিপ সাফারি হলে ৩৫০০ টাকা লাগবে। সপ্তাহান্তে টিকেটের জন্য আগে থেকে বুকিং করুন।
  • নিয়মাবলী: উদ্যানের নিয়মাবলী মেনে চলুন এবং আবর্জনা ফেলবেন না।
  • সাফারি: সাফারির সময় গাড়ির ভিতরে থাকুন এবং উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরিধান এড়িয়ে চলুন।

বান্নেরঘাটা জাতীয় উদ্যানে আপনি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং পাখি দেখতে পাবেন, যেমন বাঘ, সিংহ, হাতি, এবং বিভিন্ন ধরনের পাখি। এছাড়াও, ভারতের প্রথম প্রজাপতি পার্কটি এখানে অবস্থিত। উদ্যানের সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।


  • 3. স্নো সিটি বা বরফের শহর : বেঙ্গালুরে কৃত্তিম ভাবে তৈরী বরফের থিম পার্ক রয়েছে।  এটি একটা ইনডোর পার্ক।  গরমের মধ্যেও আপনি যদি বরফের মজা নিতে চান তবে অবশ্যই এই জায়গাটা ঘুরে নিতে পারেন।  এখানে কৃত্তিমভাবে তৈরী স্নো ফল বা  তুষারপাতের মজা নিতে পারবেন আবার স্নো রাইড বা পাহাড়ে উঠবার আনন্দও নিতে পারবেন।  এখানে রয়েছে একটি স্নো ডান্স ফ্লোর।  সম্পূর্ণ জায়গাটির তাপমাত্রা থাকে  হিমাঙ্করে নিচে।  জায়গাটা জে সি নগরে যা প্রায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে। স্নো পার্কার টিকিট ৫০০ - ৭৫০ টাকা করে।   স্নো সিটি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

বরফের শহর, ব্যাঙ্গালোরে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হল:

  • পোশাক: বরফের শহরে প্রবেশের সময় আপনাকে শীতের পোশাক প্রদান করা হবে, তবে অতিরিক্ত আরামের জন্য উষ্ণ পোশাক পরা উচিত।
  • সময়: বরফের শহর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভিড় এড়াতে সকালের দিকে যাওয়া ভালো।
  • টিকেট: সপ্তাহের দিনগুলিতে টিকেটের মূল্য ৫০০ টাকা এবং সপ্তাহান্তে ৬০০ টাকা। অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের জন্য আলাদা মূল্য রয়েছে।
  • ক্যামেরা: বরফের মধ্যে ম্যাজিকাল মুহূর্তগুলি ক্যাপচার করার জন্য ক্যামেরা নিয়ে যান, তবে চরম তাপমাত্রায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি সচেতন থাকুন।
  • ক্যাফে: বরফের শহরের মধ্যে থিমযুক্ত ক্যাফেগুলিতে গরম পানীয় দিয়ে নিজেকে উষ্ণ করুন।

বরফের শহরে আপনি বরফের মধ্যে খেলা, স্লাইডিং, স্নো রাফটিং এবং স্নো ডান্সের মতো বিভিন্ন মজার ক্রিয়াকলাপ উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়াও, ৯ডি সিনেমা এবং গেম আর্কেডে বিভিন্ন গেম খেলার সুযোগ রয়েছে।

  •  4. বিধান সৌধ : বিধান সৌধ ব্যাঙ্গালোরে একটি ঐতিহাসিক ও সরকারি ভবন। এখানে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস দিচ্ছি:
    • সময়: বিধান সৌধ সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহের শেষে এবং সরকারি ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।
    • প্রবেশ মূল্য: বিধান সৌধে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগে না। তবে ভ্রমণের জন্য অনুমতি প্রয়োজন।
    • পোশাক: সম্মানজনক পোশাক পরিধান করুন, কারণ এটি একটি সরকারি ভবন।
    • ফটোগ্রাফি: ভেতরে ফটোগ্রাফির জন্য বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। বাইরে থেকে ভবনের ছবি তোলা যেতে পারে।
    • সুরক্ষা: নিরাপত্তা চেকিং এর জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং সব ধরনের ব্যাগ এবং পার্স চেক করা হবে।

  • 5. ওয়ান্ডারলা অমুউন্সমেন্ট পার্ক :ব্যাঙ্গালোরের ওয়ান্ডারলা অমুউন্সমেন্ট পার্ক একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ। এখানে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস :
    • টিকিটের দাম: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের দাম ১৫১৬  টাকা তবে ফাস্ট ট্রাক টিকিট নিলে ৩০৩২ টাকা।  বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১২১২ ও ২৪২৫ টাকা।  এছাড়াও আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে টিকিট ভাড়া কম বেশি হয় যা সর্বনিন্ম ৯৮৫ থেকে ৩০৩২ টাকার মধ্যে হয়।  জন্মদিনের দিনে এখানে গেলে আপনাকে ফ্রি টিকিট দেয়া হবে।  টিকিট ভাড়ার পর ১৮% GST দিতে হবে।  
    • আকর্ষণ: ওয়ান্ডারলা পার্কে অনেক রাইড এবং আকর্ষণ রয়েছে, তবে কিছু বিশেষ জিনিস আছে যা দেখা উচিত:
      • ল্যান্ড রাইডস: নানা ধরনের রাইড যা সব বয়সের জন্য উপযুক্ত।
      • ওয়াটার রাইডস: গরমে ঠান্ডা হওয়ার জন্য পানির রাইড উপভোগ করুন।
      • হাই থ্রিল রাইডস: অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য উত্তেজনাপূর্ণ রাইড।
    • সময়: পার্কটি সাধারণত সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহান্তে ভিড় বেশি হয়, তাই সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনে যাওয়া ভালো।
    • পোশাক: জলের রাইডের জন্য সুইমস্যুট বা নাইলনের পোশাক পরিধান করুন।
    • সুরক্ষা: সব রাইডের আগে নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলুন এবং ছোট শিশুদের সবসময় নজরে রাখুন।
 
  • 6. কুবন পার্ক কুবন পার্ক, ব্যাঙ্গালোরের একেবারে মধ্যবর্ত্তী জায়গায় অবস্থিত, একটি সবুজ ও শান্ত অভয়ারণ্য। এখানে কিছু ভ্রমণ টিপস রইল :
    • প্রবেশ ফি: কুবন পার্কে প্রবেশের জন্য কোনো ফি নেই।
    • আকর্ষণ: পার্কের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও গাছপালা, সুন্দর ফুলের বাগান, এবং ঐতিহাসিক মূর্তি।
    • সময়: পার্কটি সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
    • করণীয়: পার্কে হাঁটাহাঁটি করুন, পিকনিক করুন, বা বই পড়ুন। এটি একটি শান্ত পরিবেশ যেখানে আপনি প্রকৃতির সাথে মিলিত হতে পারেন।
    • পরিবহন: পার্কটি ব্যাঙ্গালোরের কেন্দ্রে অবস্থিত, তাই বাস, অটোরিকশা, বা ট্যাক্সি দ্বারা সহজেই পৌঁছানো যায়।
    • শর্তাবলী : এখানে ছবি তোলা নিষেধ। 
     
  • 7. বেঙ্গালুরু প্যালেস বেঙ্গালুরু প্যালেস ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস :
সময় নির্বাচন: বেঙ্গালুরু প্যালেস সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫:৩০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভিড় এড়াতে সকালের দিকে যাওয়া ভালো।
প্রবেশ মূল্য: প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য রয়েছে, যা ভারতীয় ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিন্ন। অডিও গাইডের জন্য অতিরিক্ত চার্জ আছে।
ফটোগ্রাফি: প্রাসাদের ভেতরে ফটোগ্রাফির জন্য অতিরিক্ত চার্জ আছে। তবে বাইরের দৃশ্য ও বাগানের ছবি তোলা ফ্রি।
পোশাক: প্রাসাদে যাওয়ার সময় সম্মানজনক পোশাক পরা উচিত। হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পর্যটনের জন্য ভালো।
গাইডেড ট্যুর: প্রাসাদের ইতিহাস ও স্থাপত্য সম্পর্কে জানতে গাইডেড ট্যুর নেওয়া উপকারী।

এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনার বেঙ্গালুরু প্যালেস ভ্রমণ আরও আনন্দময় ও স্মরণীয় হবে। ভ্রমণের সময় সবসময় স্থানীয় নিয়ম ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। 


  • 8. জোহর লাল নেহেরু প্লানেটোরিয়াম: জোহর লাল নেহেরু প্লানেটোরিয়ামে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস দিচ্ছি:
প্রস্তুতি: প্লানেটোরিয়াম সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫:৫০, সোমবার বন্ধ।  ৩D শো ইংলিশ এর সময় সাধারণত দুপুর ১২:৩০ ও বিকাল ৪:৩০, সপ্তাহান্তে স্পেশাল শো হয় সকাল ১০:৩০।  তবে এই সময় কখনো কখনো বদল হয়, ফলে আগে এদের ওয়েবসাইট থেকে দেখে নিলে ভাল করবেন।  

সময় নির্বাচন: সাধারণত সপ্তাহান্তে এবং ছুটির দিনে ভিড় বেশি হয়। তাই কম ভিড়ের সময় যাওয়া ভালো।

পোশাক: প্লানেটোরিয়ামের ভেতরে ঠান্ডা থাকে, তাই হালকা সোয়েটার বা শাল নিয়ে যাওয়া ভালো।

ফটোগ্রাফি: প্লানেটোরিয়ামের ভেতরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ হতে পারে, তাই অনুমতি নিয়ে ছবি তুলুন।

শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা: প্লানেটোরিয়ামে বিভিন্ন শো এবং প্রদর্শনী থাকে যা মহাকাশ সম্পর্কে জানার জন্য উপকারী।

এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনার প্লানেটোরিয়াম ভ্রমণ আরও আনন্দময় ও শিক্ষামূলক হবে। 


  • 9.১. ইস্কন মন্দির : ইস্কন মন্দিরে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস দিচ্ছি:
প্রবেশ মূল্য: মন্দিরে প্রবেশের জন্য কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। সবাই বিনামূল্যে মন্দির দর্শন করতে পারেন।
দর্শনের সময়: মন্দির সকাল ৪:৩০ থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। মঙ্গল-আরতি এবং সন্ধ্যা আরতির সময় মন্দিরে ভক্তদের উপস্থিতি বেশি হয়।
পোশাক: মন্দিরে যাওয়ার সময় সম্মানজনক পোশাক পরা উচিত। হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পর্যটনের জন্য ভালো।
ফটোগ্রাফি: মন্দিরের ভেতরে এবং বাইরে ফটোগ্রাফি করা যায়, তবে মন্দিরের নিয়ম অনুযায়ী ফটোগ্রাফির জন্য অনুমতি নেওয়া উচিত।
প্রসাদ: দর্শনের সময় সমস্ত দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে শ্রী কৃষ্ণ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনার ইস্কন মন্দির ভ্রমণ আরও আনন্দময় ও স্মরণীয় হবে। ভ্রমণের সময় সবসময় স্থানীয় নিয়ম ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।


৯.২. জামিয়া মসজিদ, কে আর মার্কেট:  ব্যাঙ্গালোরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। ৫ তলা সম্পূর্ণ মার্বেল দিয়ে তৈরি এটি ব্যাঙ্গালোরের সব চেয়ে বড় মসজিদ।  এখানে এক সাথে ১০ হাজার মানুষ প্রাথনা করতে পারে।  
সময়: সকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৮:৩০ মিনিট পর্যন্ত এই মসজিদ খোলা থাকে।  এখানের থেকে ব্যাঙ্গালোরের অনেকগুলি ঘুরবার জায়গা খুবই কাছে হয়, যেমন টিপু সুলতান সামার প্যালেস , লালবাগ , কুবন পার্ক ইত্যাদি। 

৯.৩ সেন্ট ম্যারি'স বাসিলিকা  শিবাজী নগরে অবস্থিত ব্যাঙ্গালোরের সব চেয়ে পুরোনো ও বড় চার্চ।  ১৮৮২ সালে এই চার্চ টি স্থাপিত হয়েছিল।   সেপ্টেম্বর মাসে এখানে মা মেরির জন্মদিন পালিত হয়, এই সময়ে এখানে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়ে থাকে।  এই অনুষ্ঠানটি এখানে প্রতি বছর ১০ দিন যাবৎ পালিত হয়ে থাকে।  ইংলিশ, তামিল ও কানাড়া ভাষায় এখানে প্রাথনা হয়ে থাকে।  
  • 10. চার্চ স্ট্রিট - সেন্ট মার্ক ক্যাথিড্রাল চার্চ স্ট্রিট, ব্যাঙ্গালোরে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস নিম্নরূপ:
বইয়ের দোকান: চার্চ স্ট্রিট হল বইপ্রেমীদের স্বর্গ। ব্লসম বুক হাউসের মতো বইয়ের দোকানগুলি অবশ্যই ঘুরে দেখুন
খাবার: পানি পুরি থেকে উচ্চমানের মুঘলাই খাবারের বিকল্পগুলি পাবেন এখানে
শপিং: চার্চ স্ট্রিটে হাঁটার সময় ফুটপাথের পাশে ছোট দোকান এবং স্ট্রিট ভেন্ডরদের অফারগুলি অবহেলা করবেন না। এখানে অনন্য সংগ্রহের জন্য অনেক কিছু পাবেন
শিল্প ও সংস্কৃতি: চার্চ স্ট্রিটে অনেক আর্ট গ্যালারি এবং লাইভ পারফরম্যান্স রয়েছে, যা ব্যাঙ্গালোরের শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে
পরিবহন: ব্যাঙ্গালোরের যে কোনো স্থান থেকে রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে চার্চ স্ট্রিটে পৌঁছানো যায়।
  • 11. টিপু সুলতান ফোর্ট এন্ড প্যালেস : টিপু সুলতান ফোর্ট এন্ড প্যালেস, ব্যাঙ্গালোরে ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস নিম্নরূপ:
সময় নির্বাচন: প্যালেস সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত এবং রবিবার সকাল ৮:৩০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে
প্রবেশ মূল্য: ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য হল INR 15 এবং বিদেশি নাগরিকদের জন্য INR 200
পোশাক: সম্মানজনক পোশাক পরা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি প্যালেসের ভেতরের মিউজিয়াম ঘুরতে চান।
ফটোগ্রাফি: প্যালেসের ভেতরে এবং বাইরে ছবি তুলতে পারেন, তবে অনুমতি নিয়ে তুলুন।
ইতিহাস জানা: প্যালেসের ইতিহাস এবং স্থাপত্য সম্পর্কে জানা আপনার ভ্রমণকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এটি ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন
  1. পরিবহন: ব্যাঙ্গালোরের যে কোনো স্থান থেকে রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস বা ট্যাক্সি ব্যবহার করে প্যালেসে পৌঁছানো যায়

Saturday, 20 January 2024

নারকেল দ্বীপ বা সেন্ট মেরি দ্বীপ | St. Mary's Islands



মালদ্বীপ নাকি লাক্ষা দীপ এই বিতর্কের আবহে ঘুরে এলাম কর্ণাটকের নারকেল দ্বীপ বা সেন্ট মেরি দ্বীপ।  কর্ণাটকের উপকূলের শহর ম্যাঙ্গালোরের থাকে ৬০ কিলোমিটার দূরের মন্দির শহর উদুপি।  এই উদুপির মালপে বিচের থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের মধ্যে রয়েছে এই ছোট্ট নারকেল দ্বীপ বা সেন্ট মেরি দ্বীপ। দৈঘ্যে ৫০০ মিটার ও প্রস্থে ৩০০ মিটার ও সমুদ্রের থেকে মাত্র ১০ মিটার উঁচু এই দ্বীপে নেই কোনো বালির সমুদ্রতঠ। এই দ্বীপে নেই কোনো মানুষের বসবাস। 

১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গা মা ভারত আসবার সময়ে দীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করে ভারতবর্ষের উপকূলের এই দ্বীপটি দেখতে পায়।  যীশু খ্রিস্টের মা মেরির নাম অনুসারে তিনি এর নাম দেন সেন্ট মেরি আইল্যান্ড।  এই দ্বীপে প্রচুর নারকেল গাছ থাকার ফলে এর আরেকনাম নারকেল দ্বীপ। 

ঘুরবার জন্য এই দ্বীপ খুবই সুন্দর।  মালপে বিচ থেকে প্রতি ২০ মিনিটে মোটর বোট ছাড়ে এখানে যাবার জন্য। আসা যাওয়ার জন্য মাথা পিছু টিকিট ৪০০ টাকা।  প্রায় ২৫-৩০ মিনিট লাগে এইখানে পৌঁছাতে।  তারপর এক ঘন্টা ঘুরে আবার ফিরে আসা যায় এই মোটর বোট করে।  সকাল থেকে শুরু করে বিকাল সাড়ে ৩ টায় শেষ বোট এই দ্বীপে যাবার জন্য মালপে থেকে ছেড়ে যায়। 


আমরা টিকিট কেটে উঠে পড়লাম এমন একটা বোটে বা ইঞ্জিন নৌকায়।  বেশ কিছুটা জলে নেবে এই নৌকায় উঠতে হল।  তারপর শুরু হল এই দুর্দান্ত যাত্রা। আরব সাগরের সবুজ জলরাশি চিরে এই বোট চলল দূরে অস্পষ্ট এক জায়গার উদ্দেশে।  এই নৌকা গুলি যখন জল চিরে চলছিল, জল যেন লাফিয়ে উঠে ছুটে আসছিলো আমাদের ওপরে।  ক্রমেই হালকা একটা বিন্দুর মতো জায়গা পরিষ্কার চেহারা নিলো।  সময়ের সাথে সাথে স্পষ্ট হল এই দ্বীপ। দূর থেকে দেখতে পেলাম নারকেল গাছ গুলিকে।  কিছুক্ষন বাদেই দ্বীপের উপকূলে নামলাম আমরা, আবার জল ভেঙে ডাঙায় উঠতে হলো।  দ্বীপ থেকে ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডই যেন দিগন্তে মিলিয়ে গিয়েছে, দেখা যাচ্ছে হালকা একটা সাদা দাগ।  

দ্বীপটির ভেতরে কয়েক পা এগোলেই দেখা পেলাম পাথরের সব থাম বা পিলার।  নোটিস বোর্ড জানাল  এই দ্বীপটি ভারতের ন্যাশনাল জিওলজিকাল মনুমেন্ট তকমা পেয়েছে এর ভূপ্রকৃতির জন্য।  এই ভূপ্রকৃত ভারত বর্ষে আর কোথাও নেই।  জানলাম এমন পাথরের থাম রয়েছে পৃথিবীর সামান্য কিছু জায়গায় যেমন কাছাকাছির মধ্যে উত্তর পশ্চিম ইউরোপের আয়ারল্যান্ড এ।  



দ্বীপটি তৈরী হয়েছে আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে আজ থেকে ৬০ মিলিয়ন বছর বা ৬ কোটি বছর আগে।  লাভার থেকে এই দ্বীপে তৈরি হয়েছে অসংখ্য থাম বা পিলার।  আর সব পিলারগুলো যেন পুরো দ্বীপটিকে মোজাইক এর মতো সাজিয়েছে। আরো আশ্চর্যের এই পিলারগুলো সাধারণত ষড়ভুজ বা বহুভুজ আকৃতির, যা প্রকৃতিতে বিরল। দ্বীপটি ভারতবর্ষের সাথে সমান্তরালে অবস্থিত।  বিজ্ঞানীরা  দ্বীপের এই পাথরগুলি থেকে আবিষ্কার করেছেন যে ভারতবর্ষ এক সময় আফ্রিকার মাদাগাস্কার দেশের সাথে যুক্ত ছিল।  



পায়ে পায়ে আমরা এগিয়ে চললাম দ্বীপের ভেতরের দিকে।  চার দিকে জঙ্গল আর তারপরই অসংখ্য নারকেল গাছ।  এই দ্বীপে কোনোদিন মানুষের বসতি তৈরি হয়নি।  নেই কোনো বড় প্রাণী।  কিছু পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে এই দ্বীপের আকাশে। কতৃপক্ষ মাঝে মাঝে মানুষের বসে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে রেখেছে। আমরা হাটতে হাটতে অল্প সময়ের মধ্যেই চলে এলাম দ্বীপের অপর দিকে।  এই দিক পুরোটাই পাথরে ঢাকা, নেই সামান্যতম সমুদ্রতঠ।  তবে আশ্চর্যের এখানে পেলাম শামুক ও ছোট ঝিনুকের অসংখ্য শেল বা খোল।  এই ছোট খোল গুলিই যেন সমুদ্র তঠ তৈরি করেছে।  


সূর্যের তাপ এতক্ষনে একটু কমেছে, সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস বেশ আরামের। আমরা বেশ কিছুক্ষন কাটিয়ে , অনেক ছবি তুলে বিশ্রাম নিলাম এই দ্বীপে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাথরের কোনো একটির পরে বসে।  পাশে কাজু গাছের মতো একটা গাছ দেখে কাছে গিয়ে দেখলাম অন্য কোনো গাছ, যা আগে কখনো দেখিনি।  হয়তো এই দ্বীপের নিজস্ব কোনো উদ্ভিত , হয়তো সুদূর মাদাগাস্কার দেশের সাথে মিল আছে এর।  
একটু দূরে রয়েছে আরো বেশ কিছু উঁচু পাথর।  সরকারি নির্দেশ সেসবের পরে যেন কেউ না ওঠে।  তবে বেশ কিছু অতুৎসায়ী ভ্রমণ পিপাসু তার ওপরে উঠেই দ্বীপের মজা নিতে ব্যস্ত।  তবে এই দ্বীপের শুরুতেই নোটিস বোর্ডের মাধ্যমে সরকার  সকলকে সাবধান করে দিয়েছে এই দ্বীপের বিপদ সম্পর্কে যা লুকিয়ে রয়েছে এই লাভার তৈরী পিলারের মতো পাথরগুলির মধ্যে।  এর ধার গুলি যেন ব্লেডের মতো আর কোথাও ১০ ফিট উঁচু তো কোথাও নিচু।  এসব পাথরের ওপরে উঠে একটু ভুল হলেই হতে পারে বড়ো কোনো বিপদ।  



এসব দেখতে দেখতে আমাদের এক ঘন্টা প্রায় শেষ হয়েছে, ফলে ফিরবার পথ ধরলাম। পথে দেখলাম নারকেল কাছের ওপরে সমুদ্র চিলের বাসা।  দ্বীপের গেটের কাছে আসতেই ডাক পেলাম তাড়াতাড়ি বোটে চড়ে বসবার।  ফিরবার সময় নৌকার মাঝি টিকিট দেখতে চাইল। ভ্যাগিস সেটা গুছিয়ে রেখেছিলাম নইলে হয়তো নৌকায় উঠতেই দিতো না।  

গোটা দ্বীপে ছিল না কোনো বাথরুমের ব্যবস্থা বা জল পান বা কোনো খাবারের ব্যবস্থা।  ফলে এখানে যাবার আগে এসব জিনিসগুলি নিজেকেই ব্যবস্থা করে যেতে হবে।  


তখন সময় প্রায় বিকাল ৫ টা।  হয়তো এটাই ফিরবার শেষ নৌকা। এবার নৌকায় বেশ ভিড়।  কোথাও বসবার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই থাকতে হলো।  কিছুক্ষনের মধ্যেই  মোটরের নৌকা বীর বিক্রমে  জল চিরে আবার চলল ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে।  সুন্দর এই দ্বীপটি ধীরে ধীরে আবার ছোট হতে হতে এক সময়ে মিলিয়ে গেল দিগন্তে। দূর থেকে বড় নারকেল গাছে সারি এক একটা বিন্দুতে পরিণত হল।  তারপর সেটাও আর দেখা গেল না।  একটু পরেই নৌকা পৌছালো  মালপে সমুদ্র সৈকতে।  এর সাথে সাথে আমাদের এই সন্দুর সেন্ট মেরি আইল্যান্ড বা নারকেল দ্বীপ ভ্রমণ সম্পূর্ণ হল।   




Thursday, 30 November 2023

বাংলার বাইরে আরেক বাংলা


নদীডোবাবিলমাছধানক্ষেতে - বাংলা বললে এমনই এক দৃশ্য আমাদের মনে ভেসে ওঠে।  এমন জায়গা যেখানে গ্রামের পাস দিয়ে বয়ে যাবে নদী বা অন্তত একটা খাল। সেই খালের জলে থাকবে মাছ।  আর  জল শুকিয়ে গেলে  দিগন্ত  বৃস্তিত মাঠে ধান ক্ষেতের ওপরে দিয়ে বয়ে যাবে কোমল হাওয়াসেই হাওয়ায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ঢেউ উঠবে ধানের খেতে। গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে থাকবে ধানের  গোলা আর বৃষ্টির সময় যাতায়াতের জন্য থাকবে নৌকা।  মানুষের খাবারের পাতে থাকবে অন্তত একটা মাছ আর ভাত।  বাংলার এই রূপ চির পরিচিত।  অবশ্য এই সকল জিনিস যে শুধু বাংলায় নয় , তার বাইরেও আছে সেটা বুঝেছিলাম ভারতবর্ষের একেবারে দক্ষিণে আরব সাগরের পাড়ে থাকা একটা জায়গায়। আজ বলব সেই ঘুরবার গল্পযা আমাকে ভীষণ ভাবে অবাক করেছিল।  তারই সাথে এও বলব যে এমন এক জলা জায়গা কিভাবে ভারত সহ গোটা পৃথিবীর কাছে অন্যতম জন্যপ্রিয় ভ্রমন গন্তব্য উঠল  মানুষের আয়ের একটা প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ালো।  এই গল্প বাংলার বাইরে আরেক বাংলার গল্প।   


ভারতবর্ষের দক্ষিণে অবস্থিত কেরল রাজ্যের আলেপ্পিকেরলের প্রধান দুটি  জন্যপ্রিয় জায়গা এর একটি। কেরল রাজ্য যা আছ্ ভারতের একেবারে দক্ষিণের ভারত মহাসাগরের থেকে শুরু করে আরব সাগর ঘেসে উত্তরে প্রায় সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এক ছোট রাজ্য। এই রাজ্য লম্বায় সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটার হলেও চাওড়াতে মোটেই বলবার মতো কিছু নয় , সব থেকে মোটা জায়গাটাও  মাত্র ১২৫ কিলোমিটার মতো।  অথচ এই অল্প জায়গার মধ্যেই আছে আশ্চর্য ভূপ্রকৃতিপূর্বে সুউচ্চ পাহাড় , আর পশ্চিমে আরব সাগর।  এরই মাঝে এক চিলতে সমতল জায়গা। এই ছোট জায়গার ভূপ্রকৃতি এতটাই সুন্দর যে এখানে মানুষরা এই রাজ্যকে বলে ঈশ্বরের নিজের দেশ।  মৌসুমী বায়ু যখন ভারতে আসেপ্রথমেই এই পাহাড়ে ধাক্কা খায় আর এখানে হয় প্রচুর বৃষ্টি।  এই জল ধারা ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে নেমে চলে আসে সমতলেতৈরি করে অসংখ্য নদী - খাল - বিল।  কিন্তু এই জল প্রাকৃতিক কারণে পুরোটা সমুদ্রে চলে যেতে পারেনাসমতলে আটকে থেকে তৈরি করে জলা জায়গাযাকে বলে ব্যাক ওয়াটার।   সমতলের নিচু জায়গা গুলি প্রতি বছর এই জলে ডুবে যায়।  তৈরি হয় মানুষের জল যন্ত্রনা। অবশ্য জল যন্ত্রণাকে আর বর্তমান বলা যায়নাএমনটা আগে হতো কিন্তু বর্তমানে এই জলই এদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে।    আলেপ্পি এমনই একটা যায়গা যেখানে প্রায় ১৫-২০ টা গ্রাম নিয়মিত বৃষ্টির সময়  চলে যায় জলের নিচে। বাকি সকল জায়গার সাথে থাকেনা স্থল পথে কোনো যোগযোগ ব্যবস্থা , নৌকাই একমাত্র যাতায়াতের ব্যবস্থা। আমাদের যেমন সাইকেল - মোটর সাইকেল বা গাড়ি থাকে , ওদের থাকে হাতে টানা ছোট নৌকা বা ডিঙি - মোটর দেয়া নৌকা - শিকারা,  বিশাল বড়ো নৌকা বা হাউস বোট।  এই হাউস বোটের মধ্যে থাকে বেশ কয়েকটি ঘর , রান্নার জায়গা , বাথরুম , এসি , জেনারেটার আরো কতকি!  আবার এখানে চলে জল -বাস , আমাদের যেমন রাস্তায় বাস চলে , এখানে চলে বড় মোটর নৌকা , যাকে বলে জল-বাস।  


---------------


আমরা এই জায়গায় পৌঁছেছিলাম গাড়িতে করে।  অবশ্য চাইলে ভারতের যেকোনো জায়গা থেকে ট্রেনে এই আলিপ্পি চলে আসা যায়।  তারপর অটো বা টুকটুক ধরে চলে যায় হাউস বোট ভাড়া নেবার জায়গায়। এখানে যদি অন্তত এক রাত্রি থাকার প্ল্যান থাকে তবেই অবশ্য হাউস বোট নইলে ছোট নৌকা যাকে এখানে শিকারা বলেসেই জন্য কয়েক ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে নেয়া যায় এই গ্রাম গুলো। যদি হাউস বোট হয় তবে আপনার এখানেই থাকা  খাবারের ব্যবস্থা করবে। পুরোদিন নদীর অলি - গলি ঘুরিয়ে রাতে কোথায় দাঁড়িয়ে যাবে আবার সকালে ঘুরিয়ে আপনায় ছেড়ে দেবে যেখানে থেকে আপনার যাত্রা শুরু হয়েছিল। অবশ্য তারজন্য বেশ কিছু পয়সা গুনতে হবে। এই যেমন সিজিন হিসাবে দিনে   থেকে ১৫ হাজার ভারতীয় টাকাথাকা  খাবার এর মধ্যেই   ফলে যদি একটু সস্তায় ব্যাপারটা উপগভোগ করবার ইচ্ছা থাকে তবে শিকারা আছেই।  - ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়ে গ্রাম গুলির আলী-গলি ঘুরে নিন।  এতে অবশ্য মাত্র ১২০০-২৫০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে। অবশ্যই শুধু ঘোরা। 


আমাদের পকেটে টান কম তাই শিকারার জয় বলে উঠে পড়লাম একটায়। তিন ঘন্টা ঘুরে দেখাবে।  আমাদের মাঝি মাইকেল। স্থানীয় এক গ্রামের লোক।  এই নৌকা চালিয়েই তার দিব্যি সংসার চলে। সিজিনে  দিনে গড়ে দুই - তিন  বার কাস্টমার পেয়ে যায়। মানে দিনের শেষে - হাজার আয়।  অবশ্য এই নৌকা গুলি হাতে টানা নয়।  মোটরে চলে ফলে তেলের খরচ আছে।  আর নৌকা নিজের না হলে তার ভাড়াও গুনতে হয়।  যাইহোক দিনের শেষে তবু কম করেও কয়েক হাজার আয় হয়ে যায়।  এই জন্যই বলেছিলাম এদের এই জল আজ সৌভাগ্যের।  মাইকেল দিব্যি একটা সরু খালের মধ্যে দিয়ে নিয়ে চলল আমাদের নৌকা।  মৃদু বাতাস আর খালের চারিদিকে নারকেল ঘেরা  গ্রামের দৃশ্য সত্যিই মনো মুগ্ধকর।  কিছুটা গিয়ে পড়লাম একটা বড় বিলে।   ব্যাপারটা যেমন গলি থেকে এসে কোনো একটা বড় মাঠের মধ্যে এসে পড়েছি।  সেখানে আবার সরকার  সুন্দর একটা বসবার জায়গায় করে দিয়েছে। সেখানে ডাবচা  অন্য সব খাবারের দোকান। বেশ মজার , চারিদিকে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে ডাব বা চা যা ইচ্ছা খাও।  ওদেরও সকলে  মিলে মিশে বেশ ভাল আয়ের ব্যবস্থা। 


কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আবার চলল আমাদের নৌকা।  এবার খালের ভেতর দিয়ে যেতে মাইকেল গল্প বলছিলতাদের গ্রামের গল্প। আগে এক সময় এই গ্রামগুলিতে বন্যার জলে ডুবে যেত আর মানুষের থাকবার বা খাবারের ব্যবস্থা থাকতো না। জিজ্ঞাসা করলাম , আগে ডুবে যেত মানে কি এখন ডুবে যায় না ? হেসে দেখাল অদ্ভুত একটা জিনিস। আমরা খালের যে জলের ওপর দিয়ে যাচ্ছি সেটা পাশের গ্রামের মানুষের বাড়ির প্রায় ছাদের সমান উঁচুতে।  খালের রয়েছে উঁচু বাধ। এই বাঁধ বা পাঁচিল গ্রামগুলিকে জল থেকে রক্ষা করছে।  আর গ্রামের খালি জায়গায় হয়েছে সুন্দর ধানের খেতযার ওপর দিয়ে  হাওয়া খেলে যাচ্ছে তৈরী করছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সব ঢেউ।   


এই খাল গিয়ে মিশেল আরেকটা বড়ো খালে। এখানে দেখলাম জল-বাস  হাউস বোট গুলি ভেসে চলেছে।  ব্যাপারটা যেন একটা গলি এসে একটা পাকা রাস্তায় মিলছে আর সেখানে চলছে বড়ো বাস - গাড়িআগের গ্রামটা শেষ করে আবার একটা বড়ো বিল।  তারপর আরেকটা খালে ঢুকে এগিয়ে যেতেই মাইকেই দেখালো তার বাড়িটি। ছোট কিন্তু বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো।  উঠানে বেশ কিছু ফলের গাছ।  যদিও মাটি এই  খালের জলের থেকে এক মানুষ নিচুতে।  পাশেই আরেকটা গ্রাম। গ্রামগুলি আলাদা হয়েছে এই সকল খালের মাধ্যমে।  নেই কোনো ব্রিজ নেই সাঁকো।  আছে প্রতিটা বাড়ির সামনে হাতে টানা নৌকা আর মোটর দেয়া অন্তত একটা নৌকা।  এই নৌকাই এদের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।  গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম এখানে সব বাড়িই পাকা , নেই কোনো কাঁচা বাড়ি। অনেক বাড়ি আবার দুই তোলা।  সেসব বাড়ির মাঝে মাঝে আছে ছোট সবজি বা মুদির দোকান।  অবশ্য মাছ এর দোকান দেখলাম না।  দরকারও নেই , মাছ তো খালে আছেই যত ইচ্ছা ধরে নাও।  এসব ভাবতে ভাবতে এসে পড়লাম বিশাল বড়ো আরেকটা নদীতে।  এটা যেন হাই ওয়ে বা রাজপথ।  আবারো আরেকটা গ্রাম।  এতক্ষনে খেয়াল করলাম আগের প্রতিটা গ্রামে চার্চ বা মজ্জিদ থাকেও মন্দির দেখিনি।  এই গ্রামে আছে মন্দির।  আসলে এই কেরলে হিন্দু - মুসলিম-খ্রিস্টান সকল মানুষের বাস।  নেই কোনো মারামারি নেই দাঙ্গা।  এবার নৌকা ভিড়ল একটা হোটেলে।  আবারো নদীর পশে একজনের বাড়িতেই হোটেল।  আছে সদ্য ধরে আনা বিভিন্ন ধরণের মাছ।  ব্যবস্থা বেশ সুন্দর , কাঁচা মাছ ওজনে কেনো আর একটু বসলেই ফ্রেশ মাছ পরিষ্কার করে দারুন ভাবে ভেজে দেবে খাবার জন্য। আমরাও ৯০০ টাকায় এক কিলো স্থানীয় এক ধরণের মাছ কিনলাম। এটা দেখতে কিছুটা তেলাপিয়া  পমফ্রেট এর মতো।  গরম গরম এই মাছ ভাজাএকেবারে অতুলনীয়। খিদে কারো পাইনি তাই আর ভাত খেলাম না।  কিছুক্ষন এখানে কাটিয়ে আবার উঠে বসলাম মাইকেলের শিকারায়।  প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গিয়েছে , এবার আমরা ফিরব। এই ফিরবার পথে চেয়ে রইলাম ওই সকল খালে - বিলে ঘেরা নারকেল গাছের আড়ালে থাকা গ্রামের দিকে। ভাবলাম পাহাড়ের বৃষ্টির যে জল এই সময় এই সকল মানুষকে প্রতি বছর বন্যায় ফেলে সর্বশান্ত করে ছাড়তোসেই সকল জলকেই নিয়ন্ত্রণে এনে কি সুন্দর চাষের কাজ , মাছের ব্যবস্থা আর ভ্রমণের উপযুক্ত এক ব্যবস্থা করেছে যা কিনা গোটা ভারত তথা গোটা পৃথিবীর কাছে অন্যতম এক আশ্চর্যের  জনপ্রিয় গন্তব্যএই জল এখানের মানুষকে আজ সব দিকথেকে সম্মৃদ্ধ করছে।  ১০০শিক্ষিত এই জায়গায়  নেই কোনো দারিদ্রতা , নেই কোনো ধমীয় বিবাদসদাহাস্য এই সকল মানুষ আজ নিজেদের চেষ্টায় এই প্রতিকূল জায়গাকে বানিয়ে তুলেছে অন্যতম সেরা।  আজ এটা সত্যিই   Gods own country  - ঈশ্বরের নিজের দেশ।

পন্ডিচেরী ভ্রমণ গাইড

পন্ডিচেরী দক্ষিণ ভারতের অন্যতম ভ্রমণ স্থান। পন্ডিচেরী জায়গাটি তামিলনাড়ুর পাশে বলা ভাল তামিলনাড়ু ঘেরা ছোট্ট একটি কেন্দ্রশাসিত জায়গা।  পন্ডিচে...